চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষার্থীদের একমাত্র যাতায়াত বাহন শাটল ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ যেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় সময় দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া পাথরের আঘাতে অনেকে গুরুতর আহত হচ্ছেন। পাথর নিক্ষেপের ঘটনা কোনোভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না। সে কারণে শাটল ট্রেন শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এই বিষয়ে বারবার জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও শাটলে বগি সংকট, ইট-পাথর নিক্ষেপ থেকে শুরু করে বহিরাগতদের উৎপাতসহ রয়েছে আরও নানান সমস্যা।
চট্টগ্রাম নগর থেকে ক্যাম্পাস পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রুটে ঝাউতলা, দুই নাম্বার রেল গেট, ষোলশহর, ক্যান্টনমেন্ট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বিচ্ছিন্নভাবে এসব ঘটনা ঘটে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পাথর নিক্ষেপের হটস্পট হলো ক্যান্টনমেন্ট এলাকা। রেল লাইন এলাকার আশেপাশে বস্তি ও এলাকায় বসবাসকারী টোকাই ও বখাটেরাই মূলত এসব পাথর নিক্ষেপের সঙ্গে জড়িত।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া রাত সাড়ে ৮টার শাটল ট্রেনে অক্সিজেন রেলক্রসিং পার হওয়ার পর এবং ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনের আগে একই স্থান থেকে কমপক্ষে এক সপ্তাহ একটানা পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ইয়াসিন তোশি নামে এক শিক্ষার্থী নিক্ষেপ করা পাথরের আঘাতে মাথায় গুরুতর আহত হন। মাথায় ক্ষতস্থানে প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে তার মাথায় ব্যান্ডেজ করা হয়।
এর আগে, গত বছরের ৭ নভেম্বর ঝাউতলা রেলস্টেশন থেকে ছোঁড়া পাথরের আঘাতে সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফুয়াদ হাসান নামে এক ছাত্র চোখে আঘাত পান। তারপর ৯ জানুয়ারি দুই নাম্বার গেট রেল ক্রসিং এলাকা থেকে নিক্ষেপ করা পাথরের আঘাতে দর্শন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের কৌশিক পাল আহন হন।
প্রতিদিন টিউশন শেষ করে রাতের ট্রেনে ক্যাম্পাসে ফেরেন পালি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মহামুনি চাকমা। তিনি বলেন, প্রায় সময় দুর্বত্তরা বাইরে থেকে পাথর নিক্ষেপ করে। কিছুদিন আগেও তিনি যে বগিতে ছিলেন সেখানে এলোপাতাড়ি পাথর নিক্ষেপ করছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ হয়ে পড়ছেন। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরণের ঘটনা ঘটে যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।
কয়েকদিন আগে রাতের ট্রেনে শহর থেকে ক্যাম্পাসে ফিরছিলনে ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের জি এম মোস্তাক আহমেদ। অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মোস্তাক বলেন, বিশেষ করে শহর থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা রাতের ট্রেনটি শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, নিজের চোখে দেখেছি কিছু বখাটে ছেলেমেয়ে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে পাথর নিক্ষেপ করছে। সেদিন ভাগ্যবশত একটুর জন্য বেঁচে গেছি। একটু এদিক-ওদিক হলে মাথায় পাথর লাগতে পারত। অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তারা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তারা ট্রেন চালান। রাস্তায় রাস্তায় পাহারা দেওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু অন্যায় কাজ। তাই জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, তারা রেগুলার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। রেলওয়ে পুলিশ বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। গতকাল রাতেও তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। পুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করবে।
তিনি বলেন, তবে বাইরে থেকে যেহেতু ঢিল ছোঁড়া হয় এখানে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এছাড়াও তারা নিয়মিত মনিটরিং করছি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও বিস্তারিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।